টেলিগ্রাম শুধু একটি মেসেজিং অ্যাপ নয় বরং এটি ডিজিটাল গোপনীয়তা, দ্রুত যোগাযোগ এবং সেন্সরশিপ মুক্ত স্বাধীন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। ২০১৩ সালে রাশিয়ান উদ্যোক্তা পাভেল দুরভ ও নিকোলাই দুরভ সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টেলিগ্রাম তৈরি করেন। আজ টেলিগ্রাম বিশ্বজুড়ে ৭০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীর বিশ্বস্ত সঙ্গী। এই আর্টিকেলে আমরা টেলিগ্রামের ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য, বিতর্ক এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করব।
টেলিগ্রামের জন্ম
পাভেল দুরভ এবং তাঁর ভাই নিকোলাই দুরভ রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু রাশিয়ার সরকার যখন সেখানে নিয়ন্ত্রণ নেয় ও সেন্সরশিপ চাপিয়ে দেয় তখন পাভেল বিদ্রোহ করেন। এর ফলে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, এবং এরপরই তিনি এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করার কথা ভাবেন যেখানে গোপনীয়তা এবং স্বাধীনতা হবে প্রধান লক্ষ্য।
টেলিগ্রাম রেস্টিস্ট্যান্সের চেতনা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এর মূল স্লোগান ছিল “টেলিগ্রাম আপনার ব্যক্তিগত বার্তাগুলোকে সুরক্ষিত রাখে, এমনকি আমাদের নিজেদের কাছ থেকেও।” প্রথম দিকে এটি গোপনীয়তা সচেতন ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয় ওঠে।
টেলিগ্রামের বৈশিষ্ট্য
- এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনঃ টেলিগ্রামের সিক্রেট চ্যাট ফিচারে শক্তিশালী এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন (MTProto প্রোটোকল) ব্যবহার করা হয়, যেখানে শুধু সেন্ডার এবং রিসিভারই বার্তা পড়তে বা দেখতে পারেন। এমনকি টেলিগ্রামের সার্ভারও এই বার্তাগুলো ডিক্রিপ্ট করতে পারে না।
- ক্লাউড-ভিত্তিক স্টোরেজঃ অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের মতো টেলিগ্রাম শুধু একটি ডিভাইসে চ্যাট সীমাবদ্ধ রাখে না। ব্যবহারকারীরা ক্লাউডে ফাইল, ফটো এবং ভিডিও সেভ করতে পারেন এবং যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করতে পারেন।
- চ্যানেল, গ্রুপ ও বটঃ টেলিগ্রাম চ্যানেল ব্রডকাস্টিংয়ের জন্য তৈরী করা হয়েছে। যেখানে লক্ষাধিক সদস্য থাকতে পারে। এর গ্রুপ ব্যবস্থাও যথেষ্ট আপগ্রেটেড সর্বোচ্চ ২০০,০০০ সদস্য পর্যন্ত থাকতে পারে। টেলিগ্রামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বট অর্থাৎ অটোমেটেড টুলস (যেমন: গেম বট, নিউজ বট, শপিং বট)। টেলিগ্রাম বট দিয়ে আপনি অনেক কাজ সহজে ও কম সময়ে করিয়ে নিতে পারবেন।
- সেলফ-ডেস্ট্রয়িং মেসেজঃ ব্যবহারকারীরা এমন বার্তা পাঠাতে পারেন যা নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। যদিও এ সুযোগ বর্তমানে অনেক চ্যাটিং অ্যাপে আছে।
- ওপেন সোর্স ও স্বচ্ছতাঃ টেলিগ্রামের API এবং কোড ওপেন সোর্স, যাতে যেকোনো বিশেষজ্ঞ এর নিরাপত্তা যাচাই করতে পারেন।
টেলিগ্রাম নিয়ে বিতর্ক ও এর জনপ্রিয়তা
টেলিগ্রামের গোপনীয়তা নীতির কারণে রাশিয়া, ইরান, চীন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটিকে নিষিদ্ধ করেছে। টেলিগ্রামের গোপনীয়তা বৈশিষ্ট্য সাইবার অপরাধীদের আকর্ষণ করার কারণে কিছু দেশ দাবি করে যে টেলিগ্রাম ডার্ক ওয়েবের মতো অপকর্মের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে টেলিগ্রামও দাবি করে যে তারা অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। যেহেতু টেলিগ্রামের উপর দেশ বা রাষ্ট্র পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণ নাই বললেই চলে সেহেতু এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে।
টেলিগ্রাম প্রমাণ করেছে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব। গোপনীয়তা, গতি এবং স্বাধীনতার সমন্বয়ে টেলিগ্রাম আগামী দিনেও ডিজিটাল বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ব্যবসা বিষয়ক আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের বিজনেস ক্যাটেগোরি ভিজিট করার অনুরোধ রইল। টেলিগ্রাম নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন ইউকিপিডিয়া।
কমেন্ট করুন