ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন পর্ব-০৩ (মার্কেটপ্লেস)

ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন পর্ব-০৩ (মার্কেটপ্লেস)

ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকতে হবে। ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত দুই ধরনের মার্কেট নিয়ে কাজ করে থাকে। লোকাল মার্কেট আর ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট। লোকাল মার্কেটে ইনকাম কম অন্যদিকে প্যারা বেশি। আর ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে ইনকাম বেশি তবে অভিজ্ঞতা বেশি দরকার। তো বন্ধুরা আজ আমরা বেশ কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস নিয়ে আলোচনা করব।

মার্কেটপ্লেস কী?

আশাকরি মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে আপনাদের ধারনা আছে। তারপরও ফর্মালিটির জন্য মার্কেটপ্লেসের একটা সংজ্ঞাতো দিতেই হয়। মার্কেটপ্লেস হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ক্লায়েন্ট (যারা কাজ দেন) তারা জব পোস্ট করেন এবং ফ্রিল্যান্সার (যারা কাজ করেন) তারা বিড করেন। তবে কন্টেস্টের মাধ্যমেও কিছু কাজ করা যায়। সফলভাবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সঠিক মার্কেটপ্লেস বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

১. ফাইভার

ফাইফারে কাজ করার জন্য সাধারণত গিগ করতে হয়। এটা নতুনদের জন্য উপযুক্ত ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম। আপনার সার্ভিস (যেমন: লোগো ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি) অফার করবেন, আর ক্লায়েন্টরা আপনার গিগ কিনে নেবে। নতুনদের জন্য গিগ প্রতি ৫ থেকে ১০ ডলার রাখাই ভালো। অর্ডার আসলে দ্রুত রিপ্লাই চেষ্টা করবেন সর্বোচ্চ ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই। নতুনরা দিনে অন্তত ১০টি বায়ার রিকুয়েস্ট দিতে পারেন।

২. আপওয়ার্ক

এটি ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এবং পেশাদার মার্কেটপ্লেসগুলোর একটি। আপওয়ার্ক হলো বিড-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস যেখানে ক্লায়েন্টরা কাজ পোস্ট করে, আর ফ্রিল্যান্সাররা সেই কাজের জন্য প্রপোজাল পাঠায়। এখানে দীর্ঘমেয়াদি ও বড় বাজেটের কাজ করার জন্য আপওয়ার্ক উপযুক্ত একটি প্লাটফর্ম। আপওয়ার্কে সফল হতে হলে প্রথমে ছোট বাজেটের কাজ নিন এবং প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ টি প্রজেক্টে বিড করুন। ডলারের চিন্তা না করে রিভিউ পাওয়ার জন্য কাজ করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সময়মতো কাজ ডেলিভার করুন ও ভালো কমিউনিকেশন রাখুন।

৩. ফ্রিল্যান্সার

এটি পুরনো এবং জনপ্রিয় একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। নতুনরা চাইলে এখান থেকেও ভালোভাবে শুরু করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সারও একটি বিড-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস, যেখানে ক্লায়েন্টরা জব পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সাররা সেই কাজের জন্য বিড করে। ক্লায়েন্ট আপনার প্রপোজাল দেখে হায়ার করলে আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন। সফল হতে চাইলে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০টা বিড করুন। প্রথমে ছোট এবং সহজ জবের দিকে ফোকাস করুন। কভার লেটার কপি না করে নিজে নিজেই লিখুন।

৪. পিপল পার আওয়ার

পিপল পার আওয়ার একটি ইউরোপ-ভিত্তিক জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা গিগ তৈরি করে বা বিডের মাধ্যমে কাজ পায়। এই প্ল্যাটফর্মে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়া যায়। নতুনরা চাইলে গিগ তৈরি করে শুরু করতে পারেন এবং প্রতিদিন কিছু বিড করতে পারেন। এখানে কাস্টম প্রপোজাল পাঠানোর সুযোগ থাকায়, কভার লেটারটি ক্লায়েন্টের চাহিদা বুঝে লিখলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।

৫. টপটাল

টপটাল হলো একটি প্রিমিয়াম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যা মূলত অভিজ্ঞ এবং দক্ষ পেশাদারদের জন্য তৈরি। এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে হলে কঠিন একটি স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যেখানে ইংরেজি দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং রিয়েল টাইম টেস্ট দিতে হয়। যারা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইনার, ফিনান্স এক্সপার্ট বা প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে অভিজ্ঞ, তারা এখানে কাজ করতে পারেন। টপটাল সাধারণ মার্কেটপ্লেসগুলোর চেয়ে আলাদা, কারণ এখানে বিড করতে হয় না, বরং টপটাল আপনার স্কিল অনুযায়ী ক্লায়েন্টের সাথে নিজে থেকেই সংযোগ করে দেয়।

এগুলো ছাড়া আরো অনেক ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম আছে। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং শেখার মানসিকতা। আপনি যেই মার্কেটপ্লেসে শুরু করুন না কেন, প্রথম দিকে রেট নয়, রিভিউ পাওয়াটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। নিজে নিজে এক্সপ্লোর করুন। আর আমাদেরকেও জানান। আগামী পর্বে আমরা জানব কিভাবে একটি শক্তিশালী ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল বানাতে হয়। আজ এ পর্যন্ত। এই সিরিজের আগে পর্বগুলো দেখতে ক্লিক করুন।

কমেন্ট করুন