সাইবার নিরাপত্তায় ঝুঁকিঃ যেই সকল পাসওয়ার্ড সহজেই হ্যাক হয় 

সাইবার নিরাপত্তায় ঝুঁকিঃ যেই সকল পাসওয়ার্ড সহজেই হ্যাক হয় 

অনলাইনে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রায়শই ঝুঁকির মুখে পড়ে সহজ বা দুর্বল পাসওয়ার্ডের কারণে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে হ্যাকাররা নিত্য নতুন কৌশল ব্যবহার করে। আর বেশিরভাগ হ্যাকিং সম্ভব হচ্ছে সহজ বা দুর্বল পাসওয়ার্ড এর কারণে। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু পাসওয়ার্ড অন্য পাসওয়ার্ড এর তুলনায় বেশি হ্যাক হয়। আজ আমরা আলোচনা করব বেশ কিছু সহজ ও দুর্বল পাসওয়ার্ড সম্পর্কে। 

১. সহজে ধারণা যোগ্য 

এই ধরনের পাসওয়ার্ডগুলো এতটাই সহজ বা দুর্বল যে হ্যাকাররা অটোমেটেড টুলস দিয়ে সহজেই ক্র্যাক করতে পারে। password, 123456, admin ইত্যাদি সবচেয়ে কমন ও সহজে ক্র্যাকযোগ্য পাসওয়ার্ড। এছাড়া iloveyou, welcome, abc123, superman, pokemon এ ধরনের পাসওয়ার্ডও খুবই দুর্বল।

২. ব্যক্তিগত তথ্য নির্ভর 

অনেকে নিজের নাম, জন্ম তারিখ বা পোষ্য প্রাণীর নাম পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন, যা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সহজেই সংগ্রহ করা যায়। হ্যাকাররা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে পাসওয়ার্ড অনুমান করে।

৩. একই পাসওয়ার্ড 

একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে আপনার অন্যান্য অ্যাকাউন্টে সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সাধারণত হ্যাকাররা হ্যাক হওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে বিভিন্ন সাইটে লগিন চেষ্টা করে। প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উত্তম।

৪. পুরাতন বা অপরিবর্তিত 

বছরের পর বছর একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে ডার্ক ওয়েবে এটি লিক হয়ে যেতে পারে। Have I Been Pwned (HIBP) ওয়েবসাইটে চেক করলে দেখা যেতে পারে আপনার পাসওয়ার্ড আগেই লিক হয়েছে। অনেক সময় হ্যাকাররা পুরনো লিকড পাসওয়ার্ড দিয়ে নতুন করে অ্যাটাক চালায়। তাই অন্ততপক্ষে প্রতি ৩-৬ মাসে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

৫. শুধু নাম্বার বা ক্যারেক্টার 

পাসওয়ার্ডে শুধু সংখ্যা বা শুধু অক্ষর ব্যবহার করলে তা ক্র্যাক করা খুব সহজ। শুধু সংখ্যা (যেমন: 12345678) বা শুধু লেটার (যেমন: password) হলে কম্বিনেশন সীমিত হয়ে যায়। তাই শুধু নাম্বার বা ক্যারেক্টার ব্যবহার না করে নাম্বার, ক্যারেক্টার একত্র করে পাসওয়ার্ড তৈরি করা উচিৎ।

পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখবেন কিভাবে? 

জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুনঃ বড় হাতের অক্ষর (A-Z), ছোট হাতের অক্ষর (a-z), সংখ্যা (0-9) ও বিশেষ ক্যারেক্টার (!, @, #, $) ইত্যাদি ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। আপনার পাসওয়ার্ডটি যাতে কমপক্ষে ৮ ডিজিটের হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। উদাহরণ হিসেবে “S@f3P@ss#2024” এই পাসওয়ার্ডটি দেখা যেতে পারে তবে অবশ্যি নিজের মত করে তৈরি করে নিবেন।

দুই-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করুনঃ SMS বা অ্যাপ (Google Authenticator, Authy) ব্যবহার করে অতিরিক্ত সিকিউরিটি যোগ করুন। এতে কেউ পাসওয়ার্ড জানলেও লগিন করতে পারবে না। বা লগিন করার সময় আপনি টের পাবেন।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুনঃ LastPass, Bitwarden, বা KeePass-এর মতো টুলস ব্যবহার করে শক্তিশালী ও ইউনিক পাসওয়ার্ড জেনারেট করুন।

পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করুনঃ প্রতি ৩-৬ মাসে পাসওয়ার্ড আপডেট করুন। নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার ফলে আপনার আইডি আরো সুরক্ষিত হয়।

ফিশিং ও স্ক্যাম থেকে সতর্ক থাকুনঃ মনের ভুলেও অজানা লিঙ্ক বা ইমেইলে ক্লিক করবেন না। হ্যাকাররা অনেক সময়ই লিংকের মাধ্যমে এটাক করে থাকে।

পাসওয়ার্ড হল ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রথম স্তর, কিন্তু দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কারণে লক্ষ লক্ষ অ্যাকাউন্ট প্রতিদিন হ্যাক হয়। ঝুঁকিপূর্ণ পাসওয়ার্ডের ধরনগুলো আরও গভীরভাবে বুঝতে হলে নিয়মিত লক্ষ রাখতে হবে সাইবার সুরক্ষা ক্যাটেগরিতে। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

কমেন্ট করুন