ই-রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম

ই-রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম

বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ থাকলেও এবছর প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি এলাকা ও কিছু খাতের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেকের ধারণা এর ফলে দুর্নীতির সুযোগ অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যাবে। যাই হোক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ই-রিটার্ন এর যাবতীয় সকল তথ্য জানতে পারবেন।

কাদের জন্য?

এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ২৪-২৫ অর্থবছর ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি ইনকাম করলে তাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। তবে নারী ও ৬৫-ঊর্ধ্ব নাগরিকদের ক্ষেত্রে ইনকামের সীমা ৪ লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, টিআইএন থাকলে আপনার ইনকাম থাকুক বা না থাকুক, আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতেই হবে।

কী লাগবে?

অফলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বেশ কিছু কাগজপত্র লাগে (যেমনঃ টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, পূর্ববর্তী রিটার্নের ফটোকপি ইত্যাদি) তবে ই-রিটার্ন দাখিল করতে কোন প্রকার কাগজপত্র জমা বা আপলোড করতে হয় না। তবে বিষেশজ্ঞদের মতে সকল কাগজ পত্র সংগ্রহে থাকা উচিত। এছাড়া অনলাইনে ফরম পূরনের সময় সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস ইত্যাদির ক্ষেত্রে উৎসকরের প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হবে।

ই-রিটার্ন দাখিলের ধাপ সমূহঃ

সহজ কিছু ধাপের মাধ্যমে আপনি চাইলে আপনার ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। নিচে ই-রিটার্ন দাখিলের ধাপগুলো ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরা হলো।

১। টিআইএন সার্টিফিকেট

আমি আবারো বলছি টিআইএন সার্টিফিকেট থাকলে আপনার ইনকাম থাকুক বা না থাকুক আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবেই। ১৮ বছরের উপরে যেকোন ব্যক্তি টিআইএন সার্ফিকেট নিতে পারবেন। ই-টিআইএন নেওয়ার জন্য এখানে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয় পত্র ও ফোন নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিআইএন সার্টিফিক ডাউনলোড করে নিন।

২। ই-রিটার্ন রেজিস্ট্রেশন

অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ই-টিআইএন থাকতে হবে। টিআইএন নাম্বার ও যেই ব্যাক্তির রিটার্ন দাখিল করা হবে তার পরিচয় পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা একটি ফোন নাম্বার দিয়ে সহজেই ই-রিটার্ন পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অনলাইন পোর্টালে যেতে এখানে ক্লিক করুন।

আরও পড়ুনঃ

৩। ফরম পূরণ

  • অ্যাসেসমেন্ট ইনফরমেশনঃ এখানে রিটার্ন স্কিম, আয়ের সাল ও উৎস ইত্যাদি দিতে হয়। আপনার আয় যদি কর মুক্ত হয় তাহলে “Any taxable income in the above-mentioned income year?” এই অপশনটা নো দিয়ে দিবেন আর যদি এমন কোন আয় থাকে যার জন্য কর দেওয়া বাধ্যতা মূলক তাহলে ইয়েস দিবেন। কর মুক্ত আয় জানতে এনবিআর এর ওয়েবসাইট। এরপর “Heads of Income” অপশনে আপনার ইনকামের সোর্স উল্লেখ করে বাকি সব অপরিবর্তীত রেখে “Save & Continue” বাটনে ক্লিক করবেন।
  • এডিশনাল ইনফরমেশনঃ এডিশনাল ইনফরমেশন সেকশনে আপনার লোকেশন সিলেক্ট করবেন। যদি আপনার সমূদয় সম্পদের মূল্য ৪০ লাখ টাকা বা তারচেয়ে বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে আইটি১০বি পূরণ করতে হবে। এছাড়া বাকি সব যেমন আছে তেমন রেখে “Save & Continue” বাটনে ক্লিক করবেন।
  • ইনকাম ডিটেইলসঃ “Financial Assets Type” আপনার আয়ের উৎস সিলেক্ট করে আয় রিলেটেড ইনফরমেশন গুলো দিন। আসাকরি একাজ আপনি একাই করতে পারবেন। এখানে সবকিছু দেওয়ার পর আপনার নেট আয়ের হিসেব দেখানো হবে এরপর “Save & Continue” বাটনে ক্লিক করবেন।
  • রিবেটঃ আপনার যদি লাইফ ইনশুরেন্স, ডিপিএস, সঞ্চয় পত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি বিনিয়োগ থাকে তাহলে উল্লেখ করে “Save & Continue” বাটনে ক্লিক করবেন।
  • এসেটস এন্ড লায়বিলিটিসঃ আপনার মোট আয়ের বিপরীতে মোট ব্যয় হিসাব করতে পারবেন। এখানে খাদ্য, কাপড় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় উল্লেখ করতে হবে। এই গুলো পূরণ করলে আপনার বকেয়া করের হিসেব দেওয়া হবে
  • ট্যাক্স এন্ড পেমেন্টঃ এবার আপনি যদি কোনো উৎস কর (সঞ্চয়পত্র বা ডিপিএস) এবং অগ্রিম কর (কার বা অন্যান্য) প্রদান করে থাকলে তার হিসেব দিবেন। এই হিসেব দেওয়ার পর আপনার করের পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। এবং যেই পরিমান কর আপনি দিয়েছেন তা বাদে অবশিষ্ট কর প্রদান করতে হবে।
  • রিটার্ন ভিউঃ “Proceed to online return” বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথেই আপনাকে রিটার্ন ভিউ নামে আলাদা একটা পেজে নিয়ে যাবে। এখানে আপনার এতক্ষন ধরে পূরণ করা ফরমটি একবারে দেখতে পাবেন। উপরের নেভিগেশন মেনুতেও রিটার্ন ভিউ নামে অপশন পাবেন সেখান থেকেও রিটার্ন ভিউ পেজে যেতে পারবেন। এখানে ইংরেজির সাথে সাথে বাংলায় ফরমটি দেখতে পারবেন।
  • সাবমিশনঃ ফরম দেখার পর নিচের ডান দিকে “Submit Return” নামে একটা বাটন দেখতে পাবেন। এই বাটনে ক্লিক করার কিছু সময়ের মধ্যেই আপনার ই-রিটার্ন দাখিল হয়ে যাবে।

বিদ্রঃ ই-রিটার্ন একবার সাবমিট করলে আর এডিট করার অপশন থাকবে না। তাই অনেক সময় নিয়ে ফরম পূরণ করবেন। যাতে কোন সমস্যায় না পরতে হয়।

৪। রশিদ

যদি ই-রিটার্ন সঠিক ভাবে দাখিল হয় তাহলে আপনি একটি ওয়েলকাম ম্যাসেজ দেখতে পাবেন। এবং রেফারেন্স আইডি ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। পরবর্তী যেকোন প্রয়োজনে সেটি প্রিন্ট করে আয়কর অফিসে জমা দিতে পারবেন। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও দাখিলের জন্য এনবিআর এর ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সকলের মঙ্গল কামনায় – তাওহিদুল ইসলাম।

কমেন্ট

কাওসার মাতুব্বর

কাওসার মাতুব্বর

এত সুন্দর ও সহজ ভাবে বুঝানোর জন্য ধন্যবাদ

কমেন্ট করুন