ডাটা সায়েন্স ফান্ডামেন্টালস

ডাটা সায়েন্স ফান্ডামেন্টালস

ডাটা আধুনিক পৃথীবির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমাদের চারপাশে প্রচুর ডাটা রয়েছে। ব্যবসায়ীক থেকে ব্যক্তিগত যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে ডাটা এনালাইসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে বিশ্বব্যপি ডাটা সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ব্যপক হারে বাড়ছে। ডাটা সায়েন্সের ফ্রিল্যান্স মার্কেটও অনেক বড়। আজকে আমরা ডাটা সায়েন্সের ফান্ডামেন্টাল বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ডাটা সায়েন্স কী?

সর্বপ্রথম আমাদের জানতে হবে ডাটা সায়েন্স কী? ডাটা সায়েন্স হল ডাটা বিশ্লেষণ, প্রক্রিয়াকরণ, এবং উপস্থাপনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের একটি প্রক্রিয়া। এটি বিভিন্ন ডাটা সেটের উপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। একটু সহজ করে বলতে গেলে পূর্ববর্তী বিভিন্ন ডাটা বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য সমস্যা সমাধান বা ব্যবসা বৃদ্ধি করার পদ্ধতিকে ডাটা সায়েন্স বলে। বর্তমানে একাধিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার দেখা যায়।

ডাটা সায়েন্সের ব্যবহার

বর্তমানে ডাটা সায়েন্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। পূর্ববর্তী বিভিন্ন ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান, কোম্পানির উন্নয়ন সহ একাধিক ক্ষেত্রে ডাটা সায়েন্সের গুরুত্ব অনেক।

  • ব্যবসা ও বিপণনেঃ গ্রাহকদের কেনাকাটার অভ্যাস, পছন্দ এবং চাহিদা বিশ্লেষণ করা। গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দেওয়া। ভবিষ্যতের বিক্রয় প্রবণতা নির্ধারণ। সঠিক গ্রাহকের কাছে সঠিক সময়ে সঠিক বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া সহ ব্যবসা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালক করছে ডাটা সায়েন্স।
  • স্বাস্থ্যসেবাঃ ডেটার উপর ভিত্তি করে রোগ সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা। রোগীর ভবিষ্যত স্বাস্থ্য ঝুঁকি নির্ধারণ। নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য মডেল তৈরি করা সহ উন্নত চিকিৎসা প্রদান করতে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ডাটা ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • ই-কমার্স ও রিটেইলঃ ডেটা সায়েন্সের সব থেকে বেশি ব্যবহার হয় ই-কমার্স সেক্টরে। গ্রাহকদের আগ্রহ অনুযায়ী পণ্য সাজেস্ট করা। চাহিদার উপর ভিত্তি করে স্টকের ডাটা এনালাইসিস করা। কাস্টমার রিভিউ অ্যানালাইসিস করে পণ্যের মান উন্নয়ন করা ইত্যাদি কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাটা ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন।
  • প্রযুক্তিঃ সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরেও ডাটা এনালাইসিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবহারকারীদের সার্চ ডেটা বিশ্লেষণ করে সঠিক তথ্য প্রদান করা সহ কন্টেন্ট র‍্যাংকিং ও সেল বৃদ্ধিতেও সমান গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সায়েন্স । চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট গুলো ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের স্বয়ংক্রিয় উত্তর দিতেও ডাটা সায়েন্সের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন প্লাটফর্মে ইউজারদের জন্য কন্টেন্ট সাজেস্ট করে। এখানেও ইউজারদের ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমেই ওই সকল কন্টেন্ট সাজেস্ট করা হয়।
  • শিক্ষাঃ শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স বিশ্লেষণে ডাটা সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার দরকার। ডেটা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীর দুর্বলতা এবং শক্তি চিহ্নিত করা সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে ডাটা সায়েন্স প্রয়োজন।

ডাটা সায়েন্সের সম্ভাবনা

ডাটা সাইন্স ব্যবহার করে বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ এবং কার্যকর হয়। এটি বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। বর্তমানে প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ ডাটা তৈরি হয়, তা বিশ্লেষণ এবং ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ডাটা সায়েন্স এই ডাটাকে সহজ করে ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করছে। ডাটা সায়েন্সের মূল ভিত্তি হলো মেশিন লার্নিং এবং এআই অ্যালগরিদম। স্বয়ংক্রিয় যানবাহন থেকে স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট এমনকি রোবটিক্সের মতো ক্ষেত্রগুলোতে ডাটা সায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ডাটা সায়েন্স ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। রোগের নির্ণয়, এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন মডেল তৈরি করা যাবে। জিনোম বিশ্লেষণ এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসার বিকাশে ডাটা সায়েন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইন্টারনেট অব থিংসের (IoT) বিস্তারের মাধ্যমে প্রতিদিন অনেক ডিভাইস ইন্টারনেটে সংযুক্ত হচ্ছে। এই সকল ডিভাইস থেকে সংগৃহীত ডাটার বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি, এবং অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম তৈরি হবে।

বাংলাদেশে ডাটা সায়েন্স

বাংলাদেশে ডাটা সায়েন্স ব্যপকভাবে শুরু না হলেও এগিয়ে চলছে। দেশের ক্রমবর্ধমান ডিজিটালাইজেশন, ই-কমার্সের প্রসার, এবং প্রযুক্তি-নির্ভর সেবার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ডাটা সায়েন্সের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন ডাটা-নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া ব্যাংকিং, টেলিকম, এবং ই-কমার্সে ডাটা সায়েন্সের ব্যবহার বেড়েছে। দারাজ, রকমারি, চালডাল এর মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহক ব্যবহারের ডাটা বিশ্লেষণ করছে।

নতুন স্টার্টআপগুলো ডাটা সায়েন্স ব্যবহারের দিকে জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও ডাটা সংগ্রহ এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষ না। এখনও ডাটা গোপনীয়তা এবং সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। উন্নত প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট সবার জন্য সহজলভ্য নয়। বড় ডাটা প্রসেসিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অনেক ক্ষেত্রেই সীমিত। তারপরও ডাটা সায়েন্টিস্ট, ডাটা অ্যানালিস্ট, এবং মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্স মার্কেটেও বাংলাদেশীরা ডাটা সায়েন্সে কাজ করছে।

কিভাবে শিখবেন?

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইনে বা অফলাইনে বা উভয় পদ্ধতিতেই ডাটা সাইন্সের কোর্স করায়। তবে অবশ্যই আপনার লেগে থাকার মানুষিকতা ও প্রচুর কষ্ট করতে হবে। প্রথমেই আপনার পাইথন বা আর প্রোগ্রামিং জানতে হবে। এছাড়া ডাটা বেজ সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। ডাটা সায়েন্সে গণিত ও পরিসংখ্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণিত ও পরিসংখ্যান শেখা হয়ে গেলে ডাটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা শিখতে হবে। মেশিন লার্নিং ডাটা সায়েন্সের একটি প্রধান বিষয়। ডাটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা শেখা হলে মেশিন লার্নিং শিখতে হবে। এরপর প্রোজেক্ট করার মাধ্যমে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

ডাটা সায়েন্স একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, যা অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং বিভিন্ন সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। সঠিক অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ, এবং সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডাটা সায়েন্সের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। তৈরী করা সম্ভব দক্ষ জনগোষ্ঠী।

কমেন্ট করুন