যুদ্ধের আধুনিক অস্ত্র ড্রোন 

যুদ্ধের আধুনিক অস্ত্র ড্রোন 

একা বিংশ শতাব্দীর সকল যুদ্ধের ড্রোনের ব্যবহার লক্ষণীয়। ড্রোন বর্তমানে আইকনিক এক সমরাস্ত্রে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তি আসে মানব জীবনকে সহজ করতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। আজকের আর্টিকেলে আমরা কথা বলবো ড্রোন প্রযুক্তির উত্থান, সাফল্য ও ব্যবহার নিয়ে। 

প্রথম দিকে ড্রনের কাজ শত্রুর উপর গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে ড্রোন রণকৌশল পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকার জন্য অস্ত্র ভান্ডারে শক্ত জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। যুদ্ধে স্বল্প খরচে নির্দিষ্ট লক্ষে হামলা চালাতে ড্রোন এখন একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। প্রযুক্তির অগ্রগতি থেকে ধারণা করা যায় খুব শীঘ্রই ড্রোনের আরো ভয়ংকর রূপ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব। 

ড্রোনের বিবর্তন

ড্রোন প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য। সত্তর এর দশকে আমেরিকা ভিয়েতনাম যুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার করে শত্রু অঞ্চলের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করা হত। তখনও এটি সরাসরি আক্রমণের হাতিয়ার ছিল না, কিন্তু এর সাফল্য ভবিষ্যতের ড্রোন যুদ্ধের ভিত্তি তৈরি করে।

২০০০ সালের শুরুর দিকে আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার শুরু করে। এগুলো শুধু নজরদারিই করত না, হেলফায়ার মিসাইল দিয়ে লক্ষ্যভেদী হামলা চালাত। পাকিস্তান, ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় আল-কায়েদা ও তালিবান নেতাদের টার্গেট করে ড্রোন স্ট্রাইক যুদ্ধের ধারণাই বদলে দেয়।

বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তি আরও উন্নত। ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ার ট্যাংক ও সৈন্যদের বিরুদ্ধে সফলভাবে গ্রেনেড ফেলতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়াও ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করছে। সৌদি আরব হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ড্রোন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। ইসরায়েল গাজা ও এর অন্যান্য এলাকায় ড্রোন হামলা চালায়। এআই চালিত ড্রোন স্বাধীনভাবে টার্গেট শনাক্ত ও আক্রমণ করতে পারে। একসাথে শতাধিক ড্রোন সমন্বিতভাবে আক্রমণ চালালে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে অকার্যকর হয়ে পরে।

ভবিষ্যতে ড্রোন প্রযুক্তি হয়ে উঠবে আরও ভয়ঙ্কর হবে। ড্রোন যুদ্ধে হতাহতের ঝুঁকি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং স্বাধীন অস্ত্রের নৈতিকতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক চলছে। জেনেভা কনভেনশনের মতো আন্তর্জাতিক আইনে ড্রোনের ব্যবহার নিয়ে নতুন নিয়ম তৈরি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

ড্রোন বিপ্লব কেন?

  • ঝুঁকি হ্রাসঃ ড্রোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি পাইলটহীন। শত্রুর এলাকার গভীরে অভিযান চালানো, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মিশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পাইলটের জীবনহানির ঝুঁকি নেই।
  • সবসময় উপস্থিতিঃ ড্রোনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে অবস্থান করতে পারে, যার ফলে বিরতিহীন নজরদারি সম্ভব হয়। শত্রুর গতিবিধির উপর নিখুঁত নজরদারি চালানো যায়।
  • সুনির্দিষ্টঃ উন্নত সেন্সর এবং নির্ভুল অস্ত্র এর সমন্বয়ে ড্রোনগুলো অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, পার্শ্ববর্তী স্থাপনা বা বেসামরিক জনগণের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের সুযোগ দেয়।
  • দ্রুত প্রতিক্রিয়াঃ গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে কাছাকাছি ড্রোন দ্রুততার সাথে হামলা চালাতে পারে।
  • খরচ হ্রাসঃ একটি আধুনিক যুদ্ধবিমানের (যেমন F-35) চেয়ে একটি স্ট্রাইক ড্রোন (যেমন MQ-9) ক্রয় ও পরিচালনা খরচ অনেক কম। ছোট ট্যাকটিক্যাল বা সুইচিং ড্রোনগুলো আরও সাশ্রয়ী।
  • প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ঃ প্রচলিত বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (SAM) সিস্টেমগুলো প্রায়ই ছোট আকৃতির এবং ধীর গতির ড্রোন শনাক্ত ও ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়, বিশেষ করে ড্রোন সোয়ার্মের ক্ষেত্রে।

সামরিক ড্রোন নিঃসন্দেহে আধুনিক যুদ্ধের অন্যতম শক্তিশালী ও রূপান্তরকারী প্রযুক্তি। এটি সামরিক ক্ষমতা ও সক্ষমতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে, ঝুঁকি কমিয়েছে এবং নতুন কৌশলের জন্ম দিয়েছে। তবে, এটি একটি ধারালো দ্বিমুখী তরবারি। একদিকে এর নির্ভুলতা ও পাইলটহীন বৈশিষ্ট্য জীবন বাঁচাতে পারে অন্যদিকে এর অপব্যবহার, বেসামরিক হতাহত, আইনি ধূসর অঞ্চল এবং স্বায়ত্তশাসিত ঘাতক রোবটের সম্ভাবনা মানবতার জন্য গভীর উদ্বেগ ও নৈতিক সংকট তৈরি করে চলেছে।

কমেন্ট করুন