ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন পর্ব-০১ (ব্যাসিক)

ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন পর্ব-০১ (ব্যাসিক)

হ্যালো জনগন! আসা করি ভালো আছেন। ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি চ্যানেল এমন কি পত্র-পত্রিকাতে প্রায়ই সফল ফ্রীল্যান্সারদের নিয়ে বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখা যায়। চোখে পড়ে আকর্ষনীয় অনেক বিজ্ঞাপন। যেমনঃ ঘরে বসে ইনকাম, অনলাইনে আয়, ফ্রিল্যান্সিং শিখে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করুন, মোবাইল দিয়েই অনলাইনে আয় করুন, শুধু কম্পিউটার আর নেট কানেকশন থাকলেই ইনকাম ইত্যাদি। একারণে দিন দিন ফ্রিল্যান্সিং মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আর স্বভাবত প্রশ্ন জাগছে ফ্রিল্যান্সিং করে আসলেই কি এত টাকা ইনকাম করা সম্ভব?

এর উত্তর কিছুটা গোলমেলে। এর উত্তর যেমন “হ্যা” হতে পারে অনুরূপ ভাবে “না”ও হতে পারে। প্রথমে একটা ছোট ওভার ভিউ দেওয়ার চেষ্টা করব। কেন এর উত্তর “হ্যা”? আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ যুবক বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন যাপন করছে। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিংকে বেচে নিচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন পেশা। এখানে কোন ধরাবাধা সময় নেই অনুরূপ ভাবে নির্দিষ্ট কোন বেতনও নেই। আর বর্তমান বিশ্বে ফ্রীল্যান্সারদের চাহিদাও অনেক। তাই ফ্রিল্যান্সিং এর হাজার হাজার ক্যাটেগরি থেকে যেকোন একটি ক্যাটেগরি সিলেক্ট করে তার উপর দক্ষতা অর্জনের পর আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য তৈরী হবেন। শুরুতেই যে আপনি ভালো পরিমাণ ইনকাম করতে পারবেন তা কিন্তু সবার জন্য সঠিক নয়। আপনাকে মার্কেট চাহিদা বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে তাহলেই ইনকাম করতে পারবেন।

এবার কেন এর উত্তর “না”? প্রথমত দক্ষতা ছাড়া কোন ফিল্ডেই কাজ পাওয়া যায় না। এছাড়া দক্ষতা থাকার পরও দক্ষতার সঠিক ব্যবহার না করতে পারলেও আপনি সফল হতে পারবেন না। আবার সঠিক গাইডলাইনের অভাবে ঝড়ে যায় অনেকে। অনেকের ক্ষেত্রে সামান্য দক্ষ হয়েই মাঠে নেমে পড়েন এবং সফলতা না পেয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ছেড়ে দেন এই ফ্লিড। তো অদক্ষ, অর্ধ-দক্ষ, দক্ষতার সঠিক ব্যবহার না জানলে ফ্রিল্যান্সিং করে লাক্ষ তো দূরের কথা এক পয়সাও ইনকাম করতে পারবেন না।

এবার আসি মুল আলোচনায় ফ্রিল্যান্সিং কোন স্কিল না এটি একটি উপায় মাত্র, চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং উভয়তেই মেধা এবং সময় প্রয়োজন। তবে পার্থাক্য হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং হলো চুক্তি ভিত্তিক কাজ আর চাকরি হলো সময় ভিত্তিক কাজ। যাইহোক, বর্তমানে কিভাবে আপনি একজন সফল ফ্রীল্যান্সার হবেন? সফল ফ্রীল্যান্সার হওয়ার বেশ কিছু ধাপ আছে।

স্কিল নির্বাচনঃ

আপনি যেই কাজ করবেন সেটা আপনার পছন্দ হতে হবে। আমি আগেই বলেছি ফ্রিল্যান্সিং এর হাজার হাজার ক্যাটেগরি আছে। যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোশন গ্রাফিক্স, এপ ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি। উল্লেখিত ক্যাটেগরিগুলো বেশ জনপ্রিয়। তাই আপনি চাইলেই এখান থেকে যেকোন একটা পিক করতে পারেন। এছাড়াও ইন্টারনেটে একটু ঘাটাঘাটি করলেই আরো অনেক ক্যাটেগরি পেয়ে যাবেন।

মনে করেন আপনি ডিজাইন করতে ভালোবাসেন বা আপনার প্যাশন হলো ডিজাইন। এখন আপনি যদি মার্কেটিং দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে এটা হবে আপনার অন্যতম একটা ভুল সিদ্ধান্ত। তাই আপনার ভালো লাগাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিবেন। আর ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী হলে আপনার প্রথম কাজ হবে গুগোল করা এখান থেকে আপনি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন ধারণা পাবেন।  

দক্ষতা অর্জনঃ

আচ্ছা ধরে নিচ্ছি আমাদের স্কিল নির্বাচন শেষ। এবার আমরা নির্বাচিত স্কিলের উপর দক্ষতা অর্জন করব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে? দক্ষতা অর্জন করতে এখন আর আগের মত প্যারা নেই। এর অন্যতম কারণ ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে এমন অনেক কম্পানি আছে যারা বিভিন্ন কোর্স করিয়ে থাকে। যেমনঃ টেন মিনিট স্কুল, ব্রাইট স্কিল, ওস্তাদ ইত্যাদি। এছাড়া ইউটিউব তো রয়েছেই। তাই আমার মনে হয় দক্ষতা অর্জন এখন ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।  

ধৈর্য এবং ইচ্ছা শক্তিঃ

মনে করেন দক্ষতা অর্জন শেষ। এখন সবচেয়ে কঠিন ধাপ পার করতে হবে। এখান থেকে বেশির ভাগ ফ্রেশাররা ঝড়ে পড়েন। স্কিল নির্বাচন এবং দক্ষতা অর্জন করতে করতে আপনি অলরেডি অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেছেন। এখন আপনার কাজ পাবার কথা। কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না। চেষ্টা করছেন। তাও পাচ্ছেন না। একটু “ধৈর্য্য ধরুন আর একটু চেষ্টা করুন” কাজ পাবেন ইনশা আল্লাহ।

প্রোফাইল তৈরী ও কাজ খোজাঃ

কাজ পাবার জন্য প্রোফাইল তৈরী করাটা বেশ জরুরি। কারণ একজন বায়ার আপনার মুখের কথায় আপনাকে কাজ দিবে না। আপনাকে তার কাছে বিশ্বাস যোগ্য করে তুলতে হবে। প্রমাণ করতে হবে আপনি তার দেখা সকল ফ্রীল্যান্সারদের থেকে আলাদা এবং এক্সপার্ট। তাহলেই কেবল আপনি কাজ পাবেন। এছাড়াও লোকাল মার্কেটে কিছু কাজ করতে পারেন এতে করে ইমেজ বাড়ে। হাতে কাজ থাকলেও কাজ খোজার চেষ্টা করবেন। কারন কাজের চাপ সবসময় থাকে না।

নিয়মিত প্রাক্টিস করা ও আপডেট থাকাঃ

কাজ পেলেই যে আমি সব জানতা সমসের এমনটা ভাবলেই চলবে না। কারন আপনি যতই শেখেন না কেন শেখার কোন শেষ নেই। হোক সেটা ডিজাইন, ডেভলপমেন্ট বা মার্কেটিং। প্রতেকটি সেক্টরে প্রতিদিনই আপডেট আসতেছে। এগুলোর সাথে তাল না মিলাতে পারলে আপনি সব কিছুর পরও হারিয়ে যাবেন। আপনার চাহিদা কমে যাবে। আর এতদিনের সকল কষ্ট বৃথা যাবে।

ফ্রিল্যান্সিং দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই একথা একদম নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, ফ্রিল্যান্সিং খুব তাড়াতাড়ি কম্পিটিশন পূর্ন একটি পেশাতে পরিনত হবে। তাই আমার সাজেশন হবে বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে আর দেড়ি না করে আপনার স্কিল নির্বাচন শুরু করে দিন। আজ আর না। আগামী পর্বে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।

থেমে না থেকে এই সিরিজের পরবর্তী পর্ব ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন পর্ব-০২ পড়ুন। আসাকরি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ধারণা পাবেন। ধন্যবাদ। আরো জানতে ইউকিপিডিয়া

কমেন্ট

কাওসার মাতুব্বর

কাওসার মাতুব্বর

সময় উপযোগি পোস্ট। এত সুন্দর একটি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি পরের পর্ব গুলো খুব তাড়াতাড়ি পাব।

Rayhan Ahmed

Rayhan Ahmed

ধন্যবাদ কাওসার ভাই

কমেন্ট করুন