আপনি হয়তো শুনেছেন যে কম্পিউটার ভাইরাস থেকে দূরে থাকা কতটা জরুরি, কিন্তু আসলে কম্পিউটার ভাইরাস কী? কম্পিউটার ভাইরাস হল এক ধরনের ক্ষতিকারক সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার, যা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়ায় এবং ডেটা ও সফটওয়্যারের ক্ষতি করে।
কম্পিউটার ভাইরাসের লক্ষ্য হলো সিস্টেম নষ্ট করা, কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং ডেটা হারানো বা চুরি করা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কম্পিউটার ভাইরাস প্রোগ্রাম এবং সিস্টেমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার জন্যই তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত কোনও এক্সিকিউটেবল ফাইলের সঙ্গে যুক্ত হয়, যা ফাইল খোলার সাথে সাথেই ভাইরাসটি সক্রিয় হয়। এরপরে এটি নেটওয়ার্ক, ড্রাইভ, ফাইল-শেয়ারিং প্রোগ্রাম বা ইমেইল সংযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কম্পিউটার ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণ:
কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
১। সিস্টেমের গতি হ্রাস: কম্পিউটার যদি স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরগতিতে চলে, তাহলে এটি ভাইরাসের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
২। অনাকাঙ্ক্ষিত পপ-আপ উইন্ডো: যদি কম্পিউটার বা ব্রাউজারে অনাকাঙ্ক্ষিত পপ-আপ উইন্ডো প্রদর্শিত হয়, তবে এটি ভাইরাসের ইঙ্গিত হতে পারে।
৩। স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রোগ্রাম বন্ধ হওয়া: কোনো প্রোগ্রাম নিজে থেকেই বন্ধ হলে বা স্টার্ট মেনু থেকে চালু না হলে, এটি ভাইরাসের কারণে হতে পারে।
৪। অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয় লগআউট: কিছু ভাইরাস নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে প্রভাবিত করে এবং ব্যবহারকারীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগআউট করতে বাধ্য করে।
৫। সিস্টেম ক্র্যাশ বা বন্ধ হওয়া: কম্পিউটার ক্র্যাশ হলে বা অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ হলে, এটি ভাইরাসের ইঙ্গিত হতে পারে।
৬। ইমেইল থেকে অপ্রত্যাশিত ইমেইল পাঠানো: হ্যাকাররা ভাইরাসের মাধ্যমে অন্যের ইমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।
৭। হোমপেজের পরিবর্তন: ব্রাউজারের হোমপেজ বা সেটিংসে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন হলে, এটি ভাইরাসের উপস্থিতির ইঙ্গিত হতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
আগে ভাইরাস ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে ছড়াতো, কিন্তু এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। ভাইরাস ইমেইল, সফটওয়্যার প্যাকেজ বা সংক্রামিত কোডের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন:
১। রেসিডেন্ট ভাইরাস: এই ভাইরাস সিস্টেমের মেমোরিতে থাকে এবং ব্যবহারকারী যখন প্রোগ্রাম চালায় তখন অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে সংক্রমিত করে।
২। মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস: এই ভাইরাস বিভিন্ন পদ্ধতিতে ছড়ায় এবং সিস্টেমের হার্ডডিস্কে স্থায়ী হয়ে যায়।
৩। ডিরেক্ট অ্যাকশন ভাইরাস: এই ভাইরাস সরাসরি কম্পিউটারের মেমোরিতে ঢুকে প্রোগ্রাম ও ফাইল সংক্রমিত করে এবং তারপর নিজেই মুছে যায়।
৪। ব্রাউজার হাইজ্যাকার: ব্রাউজারের হোমপেজ এবং সার্চ ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ব্রাউজারের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
৫।ওভাররাইট ভাইরাস: এই ভাইরাস সংক্রামিত ফাইল মুছে নতুন কোড দিয়ে প্রতিস্থাপন করে, ফলে ফাইল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
৬। ওয়েব স্ক্রিপ্টিং ভাইরাসঃ এটি ওয়েবপেজের নিরাপত্তা ভেঙে ক্ষতিকারক কোড সংযুক্ত করে।
৭। ফাইল ইনফেক্টর: এটি .exe বা .com ফাইলগুলিকে সংক্রমিত করে।
৮। নেটওয়ার্ক ভাইরাস: নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং সমগ্র সিস্টেমকে অচল করে দিতে পারে।
৯। বুট সেক্টর ভাইরাস: এই ভাইরাস হার্ডডিস্কের বুট সেক্টরে আক্রমণ করে এবং সিস্টেমের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়।
কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়:
১। বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
২। পপ-আপ বিজ্ঞাপন থেকে দূরে থাকুন।
৩। ইমেইল সংযুক্তি স্ক্যান করুন।
৪। ফাইল-শেয়ারিং প্রোগ্রামের ডাউনলোড করা ফাইলগুলো স্ক্যান করুন।
এগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
এতক্ষন যাবত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ এ পর্যন্তই, অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে আরো জানতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের সাইবার সিকিউরিটি পেইজে।
কমেন্ট
কাওসার মাতুব্বর
ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য।
কমেন্ট করুন